কলা চাষ পদ্ধতি

ভূমিকাঃ

কলা মূলত ক্যালরি সমৃদ্ধ ফল। এতে ভিটামিন এ, বি-৬ ও সি এবং ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। কাঁচা কলার ভর্তা, ভাজি, তরকারী ও চপ অনেকের প্রিয় খাদ্য। কাঁচা কলা ডায়রিয়ায় ও পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূরিকরনের পথ্য হিসাবে ব্যবহ্নত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৯৪ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন কলা উৎপাদিত হয়েছে (সূত্র-ডিএই)

জলবায়ু ও মাটিঃ

পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও পানি নিকাশের সুব্যবস্থাসম্পন্ন উর্বর দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য উত্তম। গাছের বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী তাপমাত্রা ১৫-৩৫ ডিগ্রি সেঃ। তাপমাত্রা ১৩ডিগ্রি সেঃ এর নীচে কলায় শৈত্যাঘাত দেখা যায়। প্রতি মাসে গড়ে ১২০ সেঃমিঃ বৃষ্টিপাত কলা চাষের জন্য অনুকুল। শুষ্ক আবহাওয়া বা দীর্ঘকালীন খরা, শিলাবৃষ্টি, ঝড়, সাইক্লোন ও বন্যা কলা চাষের অন্তরায়।

জাতঃ

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বারি-১, বারি-২, বারি-৩, বারি-৪ ও বারি-৫ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়া উন্নত জাতের মধ্যে জি-৯ অন্যতম। দেশীয় জাতের মধ্যে অমৃত সাগর, মেহেরসাগর, সবরি, চাম্পা,বাংলা কলা, আটি কলা, আনাজি কলা অন্যতম। এছাড়া অগ্নিশ্বর, নেপালী জাতের কলা কিছু কিছু অঞ্চলে চাষ হয়

Banana
কলা

বংশ বিস্তারঃ

গাছের রাইজম বা গোড়া থেকে অঙ্গজভাবে উৎপন্ন চারা বা সাকার বা তেউরের সাহায্যে বংশ বিস্তার করা হয়। গাছের গোড়া থেকে দু’ধরনের তেউড় বা চারা বের হয়- অসি তেউড় ও পানি তেউড়। অসি তেউড়ের পাতা সরু, গুড়ি বড় এবং চারা শক্তিশালী। ভুয়াকান্ড তলোয়ারের মত। পানি তেউড়ের পাতা চওড়া, গুড়ি দুর্বল ও ছোট এবং ভুয়াকান্ডের ব্যাস আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত প্রায় একই । টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে কলা গাছের চারা তৈরি করা যায় । এ পদ্ধতিতে অল্প সময়ে প্রচুর সংখ্যক ভাইরাসমুক্ত চারা তৈরি করা যায়।

টিস্যুকালচার চারা ব্যবহারের সুবিধাদিঃ

 চারা তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়।
 চারার মৃত্যুহার কম।
 চারা রোগমুক্ত থাকে।
 সব চারার বৃদ্ধি সমান হয়।
 সব গাছের ফুল প্রায় একই সাথে আসে।
 সব গাছের ফল আহরণ প্রায় একই সাথে হয়।
 ফল পেতে সময় কম লাগে।
 রোগ ব্যবস্থাপনা কম নিতে হয়।
 শ্রমিক খরচ কম লাগে।
 ফলন বেশী হয়।

জমি তৈরি, গর্ত খনন ও চারা রোপণঃ

জমি ভালভাবে চাষ করে ১.৫-২.০ মিটার দূরে দূরে ৪৫x৪৫x৪৫ সেঃমিঃ আকারের গর্ত করতে হয়। চারা রোপনের ১৫-২০ দিন আগেই গর্তে গোবর সার ও টিএসপি মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রাখতে হবে। চারা রোপনের পর পানি দিয়ে জমি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হয়।

রোপনের সময়

অতিরিক্ত বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম। বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাস চারা রোপনের সর্বোত্তম। এ সময় মাটিতে যথেষ্ট রস থাকে, সেচের প্রয়োজন হয় না,এই সময় রোপিত চারার ফলন সবচেয়ে বেশি। কলার চারা রোপণের দ্বিতীয় সর্বোত্তম সময় হল মাঘ মাস।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগঃ

গাছ প্রতি গোবর/আবর্জনা পচা সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, মিউরেট অব পটাশ ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিঙ্ক অক্রাাইড ১.৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। স¤র্পুন গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কঅক্সাইড ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক মিউরেট অব পটাশ গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকী অর্ধেক মিউরেট অব পটাশ চারা রোপনের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে দিতে হয়। সার দেয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর সেচ দেয়া প্রয়োজন।

পানি সেচ ও নিকাশঃ

শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর জমিতে সেচ দেয়া দরকার। আবার বর্ষার সময় বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে, তার জন্য নালা করে অতিরিক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হয়।

কলা সংগ্রহঃ

ঋতু ভেদে রোপনের ১০-১৩ মাসের মধ্যেই সাধারনতঃ কলা পরিপক্ক হয়ে থাকে। কলার গাঁয়ের শিরাগুলো তিন-চতুর্থাংশ পুরো হলেই বা কলার অগ্রভাগের পু®পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝতে হবে কলা পুষ্ট হয়েছে। ফল পুষ্ট হতে আড়াই থেকে চার মাস সময় লাগে। কলার কাদি কেটে শক্ত জায়গায় বা মাটিতে রাখলে কলার গায়ে কালো দাগ পড়ে এবং কলা পাকার সময় দাগওয়ালা অংশ তাড়াতাড়ি পচে যায়।

ফলনঃ

প্রতি হেক্টরে ৩০-৬০ টন কলা উৎপাদন করা যেতে পারে।