ভূমিকাঃ
পেপে বাংলাদেশ একটি অন্যতম প্রধান ফল যা সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। রাজশাহী, পাবনা, যশোর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের চাষ হয়ে থাকে। পুষ্টি মানে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এ ফল মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কথিত আছে “দৈনিক একটি পেঁপে খাও, ডাক্তার বৈদ্য দূরে তাড়াও”। পেঁপে স্বল্পমেয়াদি ফল এবং এর চাষের জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙ্গিনায় দু চারটি গাছ লাগালে তা সারা বছর সবজি ও ফলের যোগান দিতে পারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৭ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁপে উৎপাদিত হয়েছে (সূত্র-ডিএই)
জলবায়ু ও মাটিঃ
পেঁপে গাছ উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু পছন্দ করে। পেঁপের চাষ ৩২° উত্তর ও ৩২° দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পেঁপে চাষ করা যায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ, উর্বর, গভীর সুনিস্কাসিত দোআঁশ বেলে দোআঁশ মাটি দো আঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য উত্তম। এর জন্য ৬.০ - ৭.০ অম্ল ক্ষার ক্ষারত্ব সবচেয়ে উপযোগী। পেঁপের জন্য মাটি সম্পূর্ণরূপে সুনিষ্কাশিত হওয়া চাই। জলাবদ্ধতায় গাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।
জাতঃ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯২ সালে উন্নত গুনাগুন সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল একটি পেঁপের জাত উদ্ভাবন করেন। এ জাতটির নাম শাহী পেঁপে। উচ্চ ফলনশীল একলিঙ্গী জাত। গাছের উচচতা ১.৬-২.০ মি., কান্ডের খুব নীচু থেকে ফল ধরা শুরু হয়। ফল ডিম্বাকৃতির, ফলের ওজন ৮০০-১০০০ গ্রাম, ফলপ্রতি বীজের সংখ্যা ৫০০-৫৫০ টি। শাসের পুরুত্ব ২ সে.মি., রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। ফল মিষ্টি (ব্রিক্সমান ১২%) ও সুস্বাদু। এছাড়া বর্তমানে রেড লেডি টপ লেডি ইত্যাদি বিভিন্ন নামে হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ করা হচ্ছে।
জমি নির্বাচন ও জমি তৈরিঃ
পেঁপে গাছ জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাই পেঁপের জন্য নির্বাচিত জমি হতে হবে জলাবদ্ধতা মুক্ত এবং সেচ সুবিধা যুক্ত। জমি বারবার চাষ ও মই দিয়ে উত্তম রূপে তৈরি করতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে বেড পদ্ধতি অবলম্বন করা উত্তম। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২০ -২৫ সেন্টিমিটার গভীর নালা থাকবে। নালা সহ প্রতিটি বেড ২ মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা হবে।
চারা তৈরিঃ
পেঁপের চারা বীজতলায় তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ১০ - ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে প্রতি সারিতে ৩-৪ সেন্টিমিটার পরপর ১.০ - ১.৫ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে। পলিথিন ব্যগেও চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ১৫ x ১০ সেন্টিমিটার আকারের পলি ব্যাগ সমপরিমাণ পলি মাটি, বালি ও পচা গোবরের মিশ্রণ দ্বারা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভর্তি করতে হয়। পলিব্যাগের তলায় ২-৩ টি ফুটো করতে হবে। এবং প্রতিটি ব্যাগে ২-৩ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপণের পর ২/৩ দিন অন্তর পানি দিতে হবে। বপণের ১৫-২০ দিন পর চারা বের হয় এবং ৪০- ৫০ দিন পর তা রোপনের উপযোগী হয়।
বীজ বপন ও চারা রোপনের সময়ঃ
আশ্বিন (সেপ্টেম্বর- অক্টোবর) এবং পৌষ (ডিসেম্বর- জানুয়ারি) মাস পেঁপের বীজ বপনের উত্তম সময়। বপনের ৪০- ৫০ দিন পর চারা রোপনের উপযোগী হয়।
গাছে সার প্রয়োগঃ
ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপেতে সময়মতো সার প্রয়োগ করতে হবে। উপরি হিসেবে গাছ প্রতি ৪৫০- ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০- ৫০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপনের একমাস পর হতে প্রতি মাসে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
ফল সংগ্রহঃ
সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ফলের কস যখন হালকা হয়ে আসে জলীয় ভাব ধারণ করে তখন পেঁপে সংগ্রহ করা উত্তম। অন্যদিকে ফলের গায়ে যখন হালকা হলুদ রং দেখা দেবে তখন ফল হিসাবে সংগ্রহ করতে হবে। এ অবস্থায় ফল বাজারজাতকরণ ও পরিবহন সুবিধা জনক। ফল হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর সংগ্রহে বিলম্ব হলে কাক, কোকিল, বুলবুলি সহ অন্যান্য পাখি ফল খেয়ে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ফল সংগ্রহের পর হালকা গরম পানিতে (৫০- ৫৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়) ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। সম্ভব না হলে অন্তত ঠান্ডা পানি দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে। এরপর সেগুলো ছায়ায় শুকিয়ে খবরের কাগজ দ্বারা মুড়িয়ে বাঁশের ঝুড়ি অথবা কাগজের কার্টুনে প্যাকিং করতে হবে। এতে ফল পচা রোগ কম হবে এবং পরিবহন কালে ফল কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।